স্নেহপদার্থ (Lipid)
স্নেহজাতীয় পদার্থ কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমম্বয়ে গঠিত যৌগ তবে এদের অণুতে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত ১:২:৩ নয়। স্নেহজাতীয় পদার্থ ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলের সমম্বয়ে গঠিত একটি যৌগ। স্নেহ জাতীয় পদার্থ পরিপাক হয়ে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়। ফ্যিাটি এসিড ও গ্লিসারল ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাইয়ের ভিতর অবস্থিত লসিকা নালির মাধ্যমে শোষিত হয়। স্নেহ জাতীয় পদার্থ তেলে দ্রবণীয় কিন্ত পানিতে অদ্রবণীয়। স্নেহ জাতীয় পদার্থে ২০ প্রকার ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। ফ্যাটি এসিড দুই প্রকার। যথা-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। দেহে যকৃতের মাধ্যমে ফ্যাটি তৈরি হয়। তবে যকৃতর ফ্যাটি এসিড তৈরির ক্ষমতা অত্যন্ত কম। কিছু কিছু ফ্যাটি এসিড আছে যা দেহের জন্যে অত্যাবশ্যক। যে স্নেহ জাতীয় পদার্থে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড বেশি থাকে তা বেশি উপকারী। যেমন- সয়াবিন, সরিষা, তৈল, তিলের তেল, ভূট্রোর তেল, নাড়িকেল, মাছের তেল ইত্যাদি। এসব তেল দিয়ে তৈরি খাবার উৎকৃষ্টতর স্নেহ জাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- মেয়নিজ, সালাদ ড্রেসিং, কাসুন্দি প্রভৃতি। যে সব খাদ্যে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড বেশি থাকে, সে সকল খাদ্যগুলোকে স্নেহবহুল খাদ্য বলে। যেমন- মাংস, দুধ, ঘি, মাখন, পনির, ডালডা, ডিমের কুসুম, বাদাম, চকলেট প্রভৃতি।
কোলেস্টেরল এক ধরনের অসম্পৃক্ত অ্যালকোহল। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে কোলেস্টেরল ধমনী গাত্রের অভ্যন্তরে জমা হতে থাকে একে Atherosclerosis বলে। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে গেলে কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার (যেমন- খাসির মাংস, গরুর মাংস, মগজ, কলিজা, ডিমের কুসুম ইত্যাদি) খাওয়া উচিত নয়।
পুষ্টিবিজ্ঞানিদের মতে, দৈনিক মোট শক্তির ২০-৩০% স্নেহ জাতীয় পদার্থ থেকে পাওয়া যায়। দৈনিক আহার্যে এমন স্নেহযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা অত্যাবশকীয় ফ্যাটি এসিড যোগাতে পারে এবং ভিটামিন দ্রবণে সক্ষম হয়। খাদ্যে স্নেহ পদার্থের অভাব ঘটলে দেহের চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন( এ, ডি, ই, কে) এর অভাব পরিলক্ষিত হয়। ফলে ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ দেখা দেয়। যেমন-ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে দেহের সৌন্দর্য নষ্ট করে। অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিডের অভাবে শিশুদের একজিমা রোগ হয় এবং বয়ষ্কদের চর্মরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
আরও দেখুন...